Skip to content

দুই বাংলার চলচ্চিত্র: প্রভাব ও লেনদেনের খতিয়ান

’তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য

অবিভক্ত ভারত/বাংলা থেকে ভেঙ্গে যখন পূর্ব পাকিস্তান হলো, এবং একমাত্র কেন্দ্র কলকাতার বাইরে আরেক কেন্দ্র গড়ে উঠতে থাকলো, ঢাকাকেন্দ্রিক সংস্কৃতি চর্চা শুরু হয় কলকাতার প্রভাব সাথে নিয়েই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীতে পড়েছি, দেশবিভাগের পরিপ্রেক্ষিতে যখন তিনি জানতে পারেন যে কলকাতা থেকে এখন তাকে ঢাকাকেন্দ্রিক রাজনীতি করতে হবে, তখন তার খুব মন খারাপ হয়েছিল। দেশভাগের আগে পূর্ববাংলার হিন্দু-মুসলমান সবারই কেন্দ্র ছিল কলকাতা। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও সাহিত্য-সংস্কৃতিতে কলকাতার প্রভাব অব্যাহত ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কলকাতার প্রভাব অনেকখানি কমে ঢাকার স্বকীয়তা স্পষ্ট হয়েছে।

ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনক হীরালাল সেন ছিলেন পূর্ববঙ্গের মানুষ। তবে তিরিশ-চল্লিশ দশকে কলকাতার চলচ্চিত্র কারখানা যখন রমরমা অবস্থায়, ওই পর্যায়ে পূর্ববঙ্গে মুসলমানরা বিশেষ কোনো অবদান রাখতে পারেন নি, বা বলা যায় তাদের সুযোগও দেয়া হয় নি। ওবায়েদ-উল-হক যখন ছেচল্লিশের দুর্ভিক্ষ নিয়ে ‘দুঃখে যাদের জীবন গড়া’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, তখন ছবিটির পরিবেশনা নিয়ে বিপাকে পড়েন। নিজের নাম পাল্টে রাখতে হয় হিমাদ্রি চৌধুরী, অভিনেতা ফতেহ লোহানীর নাম দেয়া হয় কিরণ কুমার। পরের ছবি ‘মানুষের ভগবান’-এর ক্ষেত্রে পরিচালক ইসমাইল মোহাম্মদ নাম পাল্টে রাখেন উদয়ন চৌধুরী। মুসলমানদের নামে ছবি চলবে না, এই ছিল পরিবেশকদের যুক্তি। সাহিত্য-সংষ্কৃতিতে নজরুল বাদে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পূর্ববঙ্গীয় মুসলমানের নাম খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হয়। কাজী নজরুল ইসলাম ‘ধ্রুব’ নামের এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং সহ-পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। নজরুল অনেক চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনাও করেন।  

Read more…

আলমগীর কবিরের রাজনীতি ও চলচ্চিত্র

আলমগীর কবির, স্কেচ মধু মণ্ডল

আলমগীর কবির আমাদের কাছে পরিচিত চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে। তবে তার ‘সীমানা পেরিয়ে’ বাদে অন্য কোনো চলচ্চিত্র খুব বেশি দর্শকপ্রিয় হয়েছে এমন নয়। কিন্তু তাতে চলচ্চিত্রকার হিসেবে তার গুরুত্ব কমে না। মুনাফামুখী চলচ্চিত্র তিনি নির্মাণও করতে চান নি। বরং শিল্পপ্রয়াসী চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে তিনি জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। চলচ্চিত্রের মতো ব্যয়বহুল মাধ্যমের বরাতে তিনি দর্শককে কেবলই বিনোদনে বুঁদ করে রাখতে চান নি, বরং সমাজে ও রাজনীতি নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরতে চেয়েছেন এবং তা করার চেষ্টা করেছেন নিজস্ব চলচ্চিত্র ভাষার মধ্য দিয়ে। তার নির্মিত ‘ধীরে বহে মেঘনা’ (১৯৭৩), ‘সূর্যকন্যা’ (১৯৭৬), ‘রূপালী সৈকতে’ (১৯৭৯), ‘সীমানা পেরিয়ে’ (১৯৭৭), মোহনা (১৯৮২), পরিণীতা (১৯৮৪), মহানায়ক (১৯৮৬) ইত্যাদি চলচ্চিত্র তাই দর্শকের কাছ থেকে বাড়তি মনোযোগ দাবি করে, তবেই সেসব চলচ্চিত্রের রসগুণ পূর্ণ আস্বাদন করা সম্ভব হয়।

অবশ্য তার মতো মানুষকে নিয়ে আলাপ কেবল চলচ্চিত্রের মধ্যে সীমিত রেখে করলে বিশাল এই ব্যক্তিত্বের এক খণ্ডিত দিকেই আলোকপাত করা হয়। আলমগীর কবির সময়ের সন্তান। একটি দেশের জন্মের পূর্বে, জন্মকালে এবং জন্মের পরের সময়ে তিনি কেবল সক্রিয় এক অংশগ্রহণকারী বা অ্যাক্টর ছিলেন না, তিনি সময়কে ধারণ করেছেন চলচ্চিত্র, সাংবাদিকতা ও অন্যান্য লেখালেখি এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে। আরেক ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব জহির রায়হান ছিলেন তার গুরু, কমরেড-বন্ধু, পরম শ্রদ্ধার পাত্র। জহির রায়হান চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে, আলমগীর কবির নির্মাণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের পরে। তবে মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের যৌথ কাজ প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে, জাতির জন্মপ্রক্রিয়ার দলিল রচনা করে গেছেন তারা যৌথভাবে। জহির রায়হানের ‘স্টপ জেনোসাইড’ চলচ্চিত্রে কবির সহযোগী হিসেবে যুক্ত ছিলেন, আর নেপথ্য ধারাবর্ণনার দায়িত্বটি তার কাছেই অর্পিত হয়েছিল। জহির রায়হানের তত্ত্বাবধানেই তিনি নির্মাণ করেন ‘লিবারেশন ফাইটার্স’ প্রামাণ্যচিত্র। তবে মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের দু’জনার অন্য একটি রাজনৈতিক ভূমিকার কথা বলতেই হয়। সমাজতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাসী দু’জন জাতীয়তাবাদীদের নেতৃত্বাধীন একটি যুদ্ধে বামপন্থীরাও যেভাবে যুক্ত হয়ে অবদান রাখতে পারেন, সেবিষয়ে নেতাদের সঙ্গে মোকাবেলা বা দরকষাকষি করেছেন। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তিনি সামান্য সম্বল নিয়ে ভারতে যান এবং তিনি বা জহির রায়হানের মতো সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের মানুষেরা জাতীয় মুক্তির আন্দোলনে, আওয়ামী লীগের জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দের অনীহার মধ্য থেকেও নিজ মেধা ও যোগ্যতায় সমাজতন্ত্রীদের জন্য যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের পরিসর তৈরীতে সচেষ্ট থাকেন।

Read more…

নীল মুকুটের রাজকন্যারা

’নীল মুকুট’ চলচ্চিত্রের পোস্টার

তাদের মাথায় নীল টুপি, সেই টুপিকেই বলা হচ্ছে নীল মুকুট। ওই ক্যাপের ওপর বাড়তি মহিমা আরোপের কারণ অবশ্য রয়েছে। এতদিন তারা ছিল অন্তরীণ ও শৃঙ্খলিত, পশ্চাৎপদতা ও অধস্তনতা ঘুচিয়ে আজ তারা শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে। এই দায়িত্ব পালনে তারা রওয়ানা দিয়েছে পৃথিবীর অপর প্রান্তে। জাতিসংঘ তাদের নিযুক্ত করেছে শান্তিপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায়। কামার আহমেদ সাইমনের ‘নীল মুকুট’-এর বিষয় হয়েছেন বাংলাদেশের নারী পুলিশ, বিশেষত যারা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষার বাহিনীতে নিযুক্ত হয়েছেন।

লিখিত-অলিখিত সেন্সর ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত স্ব-আরোপিত সেন্সরের দেশে কামার কি তাহলে দেশপ্রেমে গদগদ, নারীপ্রণোদনামূলক প্রামাণ্য বয়ান হাজির করলেন তার ছবিতে? যখন আমাদের দেশে পুলিশবাহিনী আগের তুলনায় মানে-সম্মানে-প্রতাপে অধিষ্ঠিত, এই কাহিনী বর্ণনায় কামার কতটুকু ভেতরে ঢুকতে পারলেন, এই প্রশ্ন উঠবে। বাইরে বাইরে তো শৃঙ্খলারক্ষার বাহিনীকে সর্বত্রই দেখা যায়, কিন্তু তাদের ভেতরের খবর তো আমরা কোথাও দেখি না। তাদের সামষ্টিক রূপের বহিরঙ্গ প্রকাশিত হবে তাদের তৎপরতায়, কিন্তু ভেতরের মানবিক কিংবা আবেগগত দিকটাকে আড়াল করে রাখাটাই হলো মূল ব্যাপার, তাদের শক্তির উৎসও সেখানেই। প্রশিক্ষণের সময়ই বলা হয়, “মনে যাই থাক ক্রাউডের সামনে শক্ত থাকতে হবে, এটিচিউড দেখে ক্রাউড ভয় পাবে।” এটা এত সতর্কভাবে অনুসরণ করা হয় যে, উর্দির আড়ালের জীবটিকে শেষ পর্যন্ত আমরা পুলিশ হিসেবেই মনে রাখি, রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে নয়। ছবি দেখে অনুমান করা সম্ভব, কামার নারীপ্রগতির বয়ান হাজির করার অঙ্গীকার ঘোষণার মধ্য দিয়ে পুলিশ বাহিনীর ভেতরে ঢুকেছেন, আর উর্দির আড়ালে মানুষগুলোর মানবিক অনুভূতিগুলো ক্যামেরার মেমরি কার্ডে ভরে বের হয়ে এসেছেন।

Read more…

চলচ্চিত্রে বিদেশিদের অংশগ্রহণ সহজ করা হোক

বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে যোগাযোগ ও মিডিয়া খাত–সম্পর্কিত বেশ কিছু নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করেছে। এর মধ্যে কেবল তথ্য অধিকার আইন নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি। বাকি সব নীতিমালা ও আইন নিয়েই সংশ্লিষ্ট খাত থেকে মৃদু অথবা জোরালো আপত্তি জানানো হয়েছে। কোনো কোনো নীতিমালা নিয়ে আপত্তি ও বিতর্ক সংশ্লিষ্ট খাত পেরিয়ে জনপরিসরে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮, আইসিটি অ্যাক্ট ২০১৩-এর ৫৭ ধারা, সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ (খসড়া) প্রভৃতি নিয়ে বিতর্কে সাধারণ জনগণও অংশ নিয়েছে।

ডিজিটাল মাধ্যম ও মিডিয়া খাতের বাইরে চলচ্চিত্র খাতের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সেন্সর বোর্ডকে বিলোপ করে সার্টিফিকেশন প্রথা চালুর দাবি ছিল। সরকার সম্প্রতি সার্টিফিকেশন আইন ২০১৯ (খসড়া) প্রণয়ন করেছে, সেখানে বয়স অনুযায়ী সনদ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, কিন্তু সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে নির্বাহী ক্ষমতায় ছবির প্রদর্শন সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বাতিল করার ক্ষমতা, যা আগের সেন্সর বিধিতে নেই। এই ক্ষমতা মন্ত্রণালয় থেকে ডিসি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। আগে কোনো ছবি আটকে গেলে আপিল করা যেত, হাইকোর্টে গিয়ে আদেশ নেওয়ার ব্যবস্থা ছিল, এখন সেসব সুযোগও বন্ধ হবে।

এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে দেশি চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পীর অংশগ্রহণসংক্রান্ত এক নীতিমালা (সংশোধিত, ২০২১)। এই নীতিমালার বিধিগুলো পড়লে মনে হবে বিদ্যমান সেন্সরবিধির সঙ্গে এ এক নতুন নিগড় যুক্ত হলো। প্রথমে নীতিমালাটির সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা করা যাক।

Read more…

সারাহ বেগম কবরী: মেজাজী ও মানবিক

এমসিজে ফিল্ম ক্লাবের আয়োজনে এশীয় চলচ্চিত্র উৎসবে (২০১৬, টিএসসি) অন্যান্য অতিথির সঙ্গে কবরী

আমি যখন কম বয়সে বাংলা সিনেমা দেখা শুরু করি তখন বেশি বয়সের কারণে হোক বা অন্য কোনো কারণে হোক চিত্র নায়িকা কবরীর ক্যারিয়ার একটু পড়তির দিকে, আর ববিতা মধ্যগগনে। ববিতাই আমার প্রিয় চিত্রনায়িকা ছিলেন। তবে বড় হতে হতে দেখলাম সিনিয়রদের মধ্যে, এমনকি পত্র-পত্রিকায় কবরীর কদর বেশি। যা হোক বয়স বাড়তে বাড়তে আমারও ববিতা-বায়াস অনেকখানি কমে আসে। আর পরে কবরীর সঙ্গেই কিছু দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। ববিতা-শাবানা প্রমুখ দূরের জগতের অচেনা মানুষই থেকে গেছেন, চিত্রজগতের মানুষেরা যেমন হন। আর কবরীর ছবিগুলোও পরে অনেক দেখেছি। তিনি হয়তো ববিতার মতো গর্জিয়াস নন, তবে তার মতো সাবলীল অভিনেত্রী আর একজনও ছিলেন না। ববিতা যদি সত্যজিত রায়ের ছবিতে অভিনয় করে নাম কুড়ান, তবে কবরীও ছিলেন ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী।

কবরীকে সামনাসামনি দেখি ২০০৫ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগে আমাদের এমসিজে ফিল্ম ক্লাব, (যে-সংগঠনটি আমি প্রতিষ্ঠা করি) ও অ্যামিক-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে জনসংস্কৃতি হিসেবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে ধরে নিয়ে দিনব্যাপী আড্ডা ও সেমিনার হয়। সিনিয়র সহকর্মী গীতিআরা নাসরীন আপার উদ্যোগই এক্ষেত্রে প্রধান ছিল। বাংলাদেশের মূলধারার চলচ্চিত্র তখন ঘোর সঙ্কটে। ওই সময়ে এই সেমিনারটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একাডেমিয়ায় এভাবে বাংলা জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নিয়ে, সম্ভবত তেমন আলোচনা হয়নি আগে। একটা সেশনে আমি আর কবরী পাশাপাশি বসেছিলাম।

Read more…

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র: ৫০ বছরের সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন

’মুক্তির গান’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য

বাংলাদেশ স্বাধীনে হয়েছে ৫০ বছর হলো। বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে, দেশটির ইতিহাস ও রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধ সব সময়ই এক বড় প্রসঙ্গ। মুক্তিযুদ্ধের মতো অতি-বৃহৎ এক ঘটনার যে বয়ান, স্বাভাবিক কারণেই তা আজও অসম্পূর্ণ, অনেক মৌখিক ইতিহাস আজও রচিত বা নথিভুক্ত হয়ে চলেছে, নতুন নতুন গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। আবার এক-ধাঁচের প্রাধান্যশীল বয়ানকে সবার জন্য অবশ্য গ্রহণীয় আকারে হাজির করার জোরাজুরিও প্রচলিত রয়েছে।

চলচ্চিত্র এমন এক মাধ্যম যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি সবচেয়ে বিশ্বস্ততার সঙ্গে দলিলভুক্ত হতে পারে, কারণ তা শ্রুতিচিত্রের মাধ্যমে ঘটনাকে জীবন্ত আকারে হাজির করে। এবং কিছু দূর অবধি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র তা করেছেও। কিন্তু অতৃপ্তি থেকেই গেছে। এই নিবন্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের ওপরে একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা হাজির করা হবে।

খুব বেশি চলচ্চিত্র নেই, যাতে ১৯৭১ সালের ঘটনাবলির প্রত্যক্ষ চিত্রায়ণ দেখা গেছে। প্রকরণের কারণে, প্রামাণ্যচিত্রগুলোই বিশ্বস্ততার সঙ্গে ঘটনাবলিকে সরাসরি ধারণ করে থাকে। জহির রায়হানের ‘স্টপ জেনোসাইড’ (১৯৭১) হলো এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য প্রামাণ্যচিত্র। মুক্তিযুদ্ধের সাদাকালো এই প্রামাণ্য দলিল নির্মিত হওয়ার বহু বছর পর রঙিন মুদ্রণে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হাজির হয়েছেন তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদ, তাদের ‘মুক্তির গান’ (১৯৯৫) চলচ্চিত্র নিয়ে। ‘স্টপ জেনোসাইড’–এর পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্যচিত্র এটি। এই দুই নির্মাতা মার্কিন চলচ্চিত্রকার লিয়ার লেভিনের ফুটেজ আবিষ্কার করেন মুক্তিযুদ্ধের আড়াই দশক পরে এবং সেটার ভিত্তিতে নতুন এক প্রামাণ্যচিত্র তারা উপহার দেন। তবে বিদেশি কিছু নির্মাতা বা টিভি চ্যানেল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই বেশ কিছু প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ভারতীয় নির্মাতা এস. সুখদেবের ‘নাইন মান্থস টু ফ্রিডম’ (১৯৭২)।

Read more…

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও নতুনের ভয়

বাংলাদেশে ওটিটি প্লাটফরম অবিকশিত, আলোচিত ওয়েব সিরিজ ‘তাকদির’ ভারতীয় প্লাটফরমে প্রচার হয়েছে

বর্তমান বাংলাদেশে মতপ্রকাশ পরিস্থিতি বেশ করুণ। ডিজিটাল মাধ্যমে স্বাধীনভাবে কিছু প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে আছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮। এই আইনের কারণে কেবল সামাজিক মাধ্যমের সাধারণ ব্যবহারকারী নয়, মূলধারার পেশাদারি সাংবাদিকতাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারকারী ছাড়া, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, তাদের এক বড় অংশই সাংবাদিক। সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে যদি এমন পরিস্থিতি, তবে মতপ্রকাশের অন্যান্য মাধ্যমও রয়েছে বিপদে। পুলিশ বইমেলায় বই পরখ করে দেখে, প্রয়োজনে স্টল বন্ধ করে দেয়, বই নিষিদ্ধ করে। চলচ্চিত্র মাধ্যমও এ ক্ষেত্রে বিপদের বাইরে নেই। চলচ্চিত্রকর্মীদের অনেক দিনের দাবির পর সেন্সর আইনের পরিবর্তে আসছে সেন্সর সার্টিফিকেশন আইন, যেখানে জেলা প্রশাসকদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সার্টিফিকেট পাওয়ার পরও যেকোনো চলচ্চিত্রকে তার জেলায় প্রদর্শন সাময়িকভাবে বাতিল করতে পারবেন। সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানের সেই ক্ষমতা রয়েছে সারা দেশের জন্য প্রয়োগ করার। এখন পর্যন্ত সেন্সর বোর্ডের পুলসিরাত পেরোলে প্রযোজকের আর চিন্তা থাকে না। কিন্তু সেন্সরবিধির পরিবর্তে সার্টিফিকেশন আইন চালু হয়ে গেলে, চিন্তা-দুশ্চিন্তার প্রহর শেষ হবে না কখনো। এসব আইন-কানুন চালু করার ফলে সামাজিক-রাজনৈতিক নানা অব্যবস্থাপনার চিত্র সাংবাদিকতায় বা সাংস্কৃতিক মাধ্যমে তুলে ধরার প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ২০১৫ সালে তো পুলিশ কর্তৃপক্ষ একটা চিঠি পাঠিয়েছিল সব টিভি চ্যানেলে ও চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজকদের সমিতিতে, যে পুলিশের চরিত্র থাকলে তাদের কনটেন্ট দেখিয়ে নিতে হবে।

সম্প্রতি পুলিশ বিস্ময়কর এক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। তারা পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে এই অভিযোগ এনে এক চলচ্চিত্র পরিচালক ও পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতাকে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। অনন্য মামুন পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘নবাব এলএলবি’র একটি দৃশ্যে ধর্ষণের শিকার একজন নারী পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে গেলে, দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার যেসব প্রশ্ন তাকে করেছেন, এটা ঠিক তা বাংলাদেশের কোনো চলচ্চিত্রে এর আগে দেখা যায়নি; কিন্তু এ ধরনের অভিযোগ থানায় লেখার ক্ষেত্রে কি পুলিশের প্রশ্ন এর চেয়ে শোভন হয়? চলচ্চিত্রের পুলিশ যেমন বলেছেন, এগুলো তো অভিযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে জরুরি প্রশ্ন ছিল, নইলে মামলা এগিয়ে নেওয়া যাবে না। এমন নয় যে চলচ্চিত্রে এগুলো জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পুলিশ চরিত্রটি নিজে বিকৃত আনন্দ পাওয়ার চেষ্টা করছেন (বা পরিচালক বাণিজ্যিক ব্যবহার করছেন পরিস্থিতির, দর্শকদের বিকৃত আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করছেন), দৃশ্যটি দেখে এ রকম মনে হয়নি। অবশ্যই এটা বলা যায়, এই আলাপ ছিল অস্বস্তিকর এক প্রসঙ্গে এবং এটি পরিবারের সব সদস্যের একসঙ্গে বসে দেখা মুশকিলই হবে। কিন্তু দৃশ্যটি অবাস্তব ছিল এমনটি একেবারেই বলা যাবে না। বরং কুৎসিত বাস্তবতার প্রতিফলন এতে দেখা গেছে। আমরা একে শিল্পমাধ্যমে না তুলে আনার মাধ্যমে চোখ-কান বন্ধ রাখতে পারি, কিন্তু পরিস্থিতি তাতে বদলাচ্ছে না মোটেও। নারীর প্রতি সহিংসতা কী ভয়ংকর হতে পারে তা আমরা কয়েক মাস আগেই দেখেছি বেগমগঞ্জের ভিডিওতে।

Read more…

এক্সট্রাকশন: শ্বেতাঙ্গ মহাপুরুষের নোংরা ঢাকায় উদ্ধার-অভিযান

Extraction 4

অবশেষে বাংলাদেশ ও ঢাকা হলিউডের চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু হলো। এর আগে ‘অ্যাভেঞ্জার্স’ চলচ্চিত্রের একটা দৃশ্য বাংলাদেশে চিত্রায়তি হয়েছিল, এবার পুরো চলচ্চিত্র নির্মিত হলো ঢাকাকে নিয়ে। অবশ্য ‘অ্যাভেঞ্জার্স’-এর দৃশ্যটি শুটিং হয়েছিল সীতাকু-ের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে, কিন্তু পুরো ছবির কাহিনী ঢাকাকেন্দ্রিক হলেও, এমনকি ছবির নাম প্রাথমিকভাবে ‘ঢাকা’ বলে প্রচারিত হলেও, স্যাম হারগ্রেভ পরিচালিত ও নেটফ্লিক্স পরিবেশিত ‘এক্সট্রাকশন’ ছবির শুটিং একেবারেই ঢাকায় হয়নি, হয়েছে ভারতে ও থাইল্যান্ডে। অবশ্য শহরের কিছু প্লেট শট ব্যবহার হয়েছে কয়েক দফায়।

ঢাকাকে নিয়ে যে কাহিনী ফাঁদা হয়েছে এখানে, তা নিয়ে কথা বলা দরকার। সাধারণত হলিউডের অ্যাকশন ও থ্রিলারধর্মী চলচ্চিত্রের কাহিনী যখনই ভিন্নদেশের প্রেক্ষাপটে লেখা হয়, তখন ভিলেন বা অশুভ শক্তি ওই দেশেই বসবাস করে। আর আমেরিকা থেকে সাদা একজন মহামানব বা সুপারম্যান শুভশক্তির পক্ষে লড়াই করতে, সেই দেশে হাজির হয়ে যেত। এতদিন আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ভিলেনদের বসবাস দেখা গেছে, কখনো বা মধ্যপ্রাচ্য বা রাশিয়ায়ও তাদের উপস্থিতি ছিল, এবার দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশে। এবং যথারীতি একজন শ্বেতাঙ্গ ত্রাতা এখানে হাজির। অবশ্য তিনি এবার আমেরিকা থেকে আসেন নি, এসেছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে। Read more…

বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র

Picture 3.jpg

চিত্র: ‘মাটির ময়না’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য। ‘মাটির ময়না’র সূত্রেই বিশ্ব আঙ্গিনায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র প্রবেশ করেছে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের দুর্দিনের কথা শোনা যাচ্ছে বহুদিন থেকেই। বিশেষত অভ্যন্তরীণ চলচ্চিত্র-ব্যবসা মন্দার মধ্যেই আছে, এবং সেটা নব্বই দশক থেকেই। এই শতকের শুরুতে এই মন্দা মহামন্দায় পরিণত হয়, যদিও গত প্রায় এক দশকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু প্রেক্ষাগৃহ একের পর এক বন্ধ হয়েই চলেছে। খুব সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেল রাজশাহীর একমাত্র প্রেক্ষাগৃহটিও। আবার ঘুরে দাঁড়ানোর মধ্যেও রয়েছে ফাঁকি। সাম্প্রতিক সময়ে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্রধান প্রবণতা। এই যৌথ প্রযোজনা বলতে মূলত ঢাকা আর কলকাতার স্টুডিওর মধ্যকার প্রযোজনাই বোঝায়। পাশাপাশি আরেকটি জিনিস চলছে, সাফটা চুক্তির মাধ্যমে আমদানি-রফতানির প্রক্রিয়া। অর্থাৎ কেউ যদি কলকাতার চলচ্চিত্র আমদানি করে তবে, ঢাকার একটি চলচ্চিত্র তাকে কলকাতায় বা পশ্চিমবঙ্গে রফতানি করতে হবে। যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রের নিয়ম হলো, দুই দেশের সমান অংশগ্রহণ থাকতে হবে। কার্যক্ষেত্রে যেটা হচ্ছে, যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রের বেশিরভাগ কাজই হয় কলকাতায়, কারণ দক্ষ কলাকুশলী ও প্রযুক্তিগত সুবিধা সেখানেই বেশি। ওদিকে অর্থের বিনিয়োগ ও লাভের বণ্টনে স্বচ্ছতা নেই। এমনও দেখা যাচ্ছে, এদেশী প্রযোজক বলছেন, যৌথ প্রযোজনার অনুমতি না পেলে আমদানী করবো। কথাটা বেশ অদ্ভূত শোনায়। ব্যাপারটা কি এরকম — চলচ্চিত্র যৌথ হোক বা না হোক, সেটা কলকাতাতেই আছে, কিন্তু যেহেতু ওই চলচ্চিত্রে এদেশের প্রযোজকের বিনিয়োগ আছে, যৌথের অনুমতি না পেলে, ওটা আমদানির নামে চলে আসবে? আবার দেখা যায়, আমদানিকৃত চলচ্চিত্র এদেশে ২০০ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে, অথচ পশ্চিমবঙ্গে যে ছবি গেছে তা কলকাতার বাইরে একটি বা সামান্য ক’টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে। যৌথ প্রযোজনা ও আমদানি-রফতানির কারবারে আমরা কিছুটা উন্নত নির্মাণশৈলীর বিনোদনধর্মী চলচ্চিত্র পাচ্ছি বটে, আমাদের অল্প কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী কলকাতাতেও পরিচিত হয়ে উঠছেন বটে, কিন্তু বাংলাদেশ যেন ব্যবহৃত হচ্ছে ভারতীয় বাংলা ছবির সম্প্রসারিত বাজার হিসেবে। সাম্প্রতিক এই দুই প্রবণতা থেকে স্থানীয় চলচ্চিত্র উপকৃত হচ্ছে না, বরং আমরা উৎপাদকে থেকে ক্রমশ কেবল-ভোক্তায় পরিণত হচ্ছি।

এই প্রবণতার বাইরে যৌথ প্রযোজনা বা কো-প্রডাকশনের আরেকটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেটা বিনোদনধর্মী বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের কারখানার বাইরে ঘটে চলেছে, এবং এটি ঘটে চলেছে স্বাধীন নির্মাতাদের হাত ধরে। এখানে চিত্রটি প্রায় উল্টো। Read more…

আলমগীর কবিরের চলচ্চিত্র ও জাতীয় মুক্তি ভাবনা

Alamgir Kabir

চিত্র: ‘চলচ্চিত্র ও জাতীয় মুক্তি’ গ্রন্থের প্রচ্ছদ

‘ধীরে বহে মেঘনা’ (১৯৭৩), ‘সূর্যকন্যা’ (১৯৭৬), ‘রূপালী সৈকতে’ (১৯৭৯), ‘সীমানা পেরিয়ে’ (১৯৭৭) চলচ্চিত্রের পরিচালক আলমগীর কবির চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে আমাদের কাছে বেশি পরিচিত। কিন্তু এর পূর্বে তিনি লন্ডনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পত্রিকা ‘সাইট অ্যান্ড সাউন্ড’-এর নিয়মিত চিত্রসমালোচক ছিলেন, অংশ নিতেন কান-বার্লিন-ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে, চিত্রসমালোচক হিসেবে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। তবে মুক্তিযোদ্ধ বলতেই যেমন ফ্রন্টে লড়াই করা সশস্ত্র সৈনিক বোঝায়, ঠিক তেমনভাবে নয়, তার যুদ্ধক্ষেত্রের পরিধি ছিল তার চাইতে ব্যাপক। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় হবার পূর্বে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন আলজেরিয়ার মুক্তিযুদ্ধে, সদস্য হয়েছিলেন আলজেরিয়ার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এফএলএন-এর। তিনি প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতায় সাহায্য করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এসবকিছু করছিলেন লন্ডনে তার প্রবাসজীবনে। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৬৩ সালে গঠন করেন এক গোপন সংগঠন — নাম ‘ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট’। সংগঠনের প্রচারপত্র হিসেব বের করা শুরু করেন ‘এশিয়ান টাইড’ ও ‘পূর্ব বাংলা’ নামে দুই ভাষার দুই পত্রিকা। তখনও ছয় দফা প্রবর্তিত হয় নি, খুব কম মানুষই তখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু আলমগীর কবিররা ষাটের দশকের শুরুতেই সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন, হালকা অস্ত্র চালাতে শেখেন, নাশকতামূলক কাজের জন্য ট্রেনিং নেন। প্রকৌশলী হিসেবে একটি বহুজাতিক কোম্পানির লোভনীয় চাকরি ছেড়ে তিনি ১৯৬৬ সালে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসেন দেশকে স্বাধীন করার জন্য, যদিও তখন পর্যন্ত এদেশে স্বাধীনতার কথা খুব কম লোকেরই মাথায় এসেছে। পাকিস্তান সরকার ১৯৬৬ সালেই তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। পরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ইংরেজি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। জহির রায়হানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কয়েকটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র।

একদিকে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, অন্যদিকে মুক্তিসংগ্রামী — এই দুই বড় পরিচয় যার, তার বাংলা ভাষার লেখাপত্রকে এক জায়গায় করে, তার মৃত্যুর বহু বছর পরে ২০১৮ সালে যদি কিছু উদ্যমী তরুণের সুসম্পাদনায় ৩৫৩ পৃষ্ঠার কোনো বই বের হয়, এবং সেই বইয়ের শিরোনাম যদি হয় ‘চলচ্চিত্র ও জাতীয় মুক্তি’ তবে একবাক্যে বলা যায়, শিরোনাম যথার্থ হয়েছে। Read more…